কৌশিকি - ০১

 সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটা দেখছিল কৌশিকি।মানদা'র ডাকে হুশ ফিরলো।

"বৌদি খাবার বেড়ে দিয়েছি।চলে এসো।"
কৌশিকি ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বুঝলো ন' টা বাজে।৯:৩৫ তাকে ৩৬/B বাস ধরতে হবে।যাওয়ার সময় ঋতমকে স্কুল বাসে তুলে দিতে হবে।
কৌশিকি সেনগুপ্ত।ইতিহাসের অধ্যাপিকা।সুদীপ্তের সাথে বিয়েটা হয়েছিল মাত্র এক বছরের পরিচয়ে।কৌশিকি বরাবরের মেধাবী ছাত্রী ছিল।বিশ্বভারতী থেকে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে সবে তখন কলকাতায় অধ্যাপনা শুরু করেছে।সুদীপ্ত তখন কেন্দ্র সরকারের কোল বিভাগে চাকরি পেয়েছে।আর্ট গ্যালারিতে আলাপ হয়েছিল সুদীপ্তের সাথে কৌশিকির তারপর আসতে আসতে সম্পর্কটা গড়ে ওঠে দু'জনের।সুদীপ্তের মা তখনও বেঁচে।কৌশিকির সাথে অনুষ্ঠানেই বিয়ে হয়।ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কৌশিকি আধুনিকা হলে উগ্র মডেলার দের মত নয়।কৌশিকি শাঁখা-সিঁদুর না পরাতে সুদীপ্ত বা তার শাশুড়ির কোনো আপত্তি ছিল না।তবে কৌশিকি শাড়ি পরতেই ভালো বাসে।বাড়ীতে গাউন বা নাইটি পরলেও বাইরে সবসময়ই শাড়ি পরে।ঋতম জন্মাবার দুই বছর পর কৌশিকির শাশুড়ি গত হন।বলতে বলতে কৌশিকি ৩৫ এ পা দিয়েছে।রূপের ছটা এখনও কমেনি।গায়ের রং এমনিতেই খুব ফর্সা।তার ওপরে স্লিম চেহারা হলেও মডেলদের মত রুগ্ণ নয়।যেখানে যেমন প্রয়োজন তেমনই।মুখের মধ্যে একটা বাঙালি মিষ্টতা রয়েছে।যেকোনো মানুষ যে কৌশিকির রূপে মূগ্ধ হবে তা নিশ্চিত।সুদীপ্তের এক ছবি আঁকিয়ে বন্ধুতো কৌশিকির ছবি আঁকবার জন্য একদা প্রায়ই বলতো।সেই সাথে কৌশিকির ব্যক্তিত্ব কলেজের ছাত্রী থেকে অধ্যাপকরাও সমীহ করে।এমনিতে কৌশিকি সামাজিক হলেও নির্জনতা পছন্দ করে।সুদীপ্ত সে জন্যই বেলঘরিয়ার এক হাইওয়ে ধারে বিস্তীর্ন মাঠের মাঝে বড় জমি কিনে বাড়ী করেছে।কৌশিকি মানদা না থাকলে নিজেই সব কাজ সামলায়।ঋতমটাও যত বড় হচ্ছে দুস্টুমি বাড়ছে।কৌশিকি নিজের কলেজ, বাড়ী,ঋতমকে সামলানো সবই একসাথে করে।
কৌশিকি শাড়ি পরছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।মানদার চোখ পড়ছিল কৌশিকির দিকে।সত্যিই বৌদি কি সুন্দরী।
মানদা কৌশিকিকে দেখে মুগ্ধ হয়।এ বাড়িতে সে ঋতমের জন্মের সময় থেকে কাজ করছে।কৌশিকির কলেজে চারদিন ক্লাস থাকে।বাকি দিন গুলো তাকে বাড়ীতে একাই কাটাতে হয়।অবশ্য একা থাকলে বই তার সঙ্গী আর মানদা যতক্ষন থাকে তার সাথে কথা বলে কেটে যায়।কৌশিকি ঋতমকে বাসে তুলে নিজে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল।
এই জায়গাটা বাসস্টপ নয়।হাইরোডের ধারে কৌশিকি হাত দেখালেই বাস দাঁড়িয়ে যায়।প্রতিদিনের যাত্রী বলে বাস এখানে দাঁড়ায়।কৌশিকির মনে হল বাস বোধ হয় আজ দেরি করছে।
গরমের দিন।তার ওপর সিল্কের শাড়ি পরলে ঘামে শরীর ভিজে যায়।কৌশিকি একটা পুরোনো পরিত্যাক্ত দোকানঘরের ছায়া তলে দাঁড়িয়েছিল।হঠাৎ কৌশিকি দেখলো সামান্য দূরে যেখান থেকে ফ্লাইওভার শুরু হয়েছে তার তলায় একটা পাগল বসে বিড়ি টানছে।লোকটাকে আগে কখনো দেখেনি কৌশিকি।লোকটার পরনে ঝোলা একটা পুরোনো ছেঁড়া জামা।জামাটা এতোটাই ময়লা তার রং চেনা মুস্কিল।গাল ভরতি দাড়ি।তার সাথে কুৎসিত দর্শন।তবে লোকটা ভিখারি বা পাগল হলে কি হবে।চেহারা দেখে মনে হয় খেতে পায়।লম্বায় প্রায় ৬'ফুট।একসময় মনে হয় ভালো চেহারা ছিল।বয়স বোঝা মুস্কিল।ঠিক সেসময়ই কৌশিকি দেখলো বাস আসছে।হাত দেখাতেই বাস দাঁড়িয়ে পড়লো।বাসে উঠতেই জানলার পাশে একটা সিট পেয়ে বসতে গিয়ে কৌশিকির নজর আবার একবার জানলার বাইরে ওই লোকটির দিকে পড়তেই কৌশিকি দেখলো লোকটি একটা লাঠি ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।লোকটির একটি পা' নেই।হাঁটুর কাছ থেকে পা'টা কাটা।
 
থার্ড পিরিয়ডে ক্লাস থেকে ফিরেই স্টাফরুমে এসে বিশ্রাম নেয় কৌশিকি।পাশের টেবিলে চারুশীলা দি বসে টিফিন করছিলেন।চারুদি কলেজের সবচেয়ে বয়স্ক অধ্যাপিকা।একমাস পরই রিটায়ার্ড নিচ্ছেন।কলিগদের সাথে কৌশিকি ভালো ব্যবহার রাখলেও চারুদিই কৌশিকির কাছের।অবসরের পর চারুদি ছেলের কাছে ইউএসএ চলে যাবেন।চারুদির ছেলে নিউজার্সিতে থাকে।কৌশিকিকে দেখেই চারুদি বলল,'তোর ফোনটা বেশ বাজছিল,সুদীপ্ত ফোন করেছিল।আমি অবশ্য ধরিনি।'
কৌশিকি ক্লাসে গেলে ফোনটা রেখে যায়।ফোনের দিকে তাকাতেই নজরে এলো চারটে মিসড কল।সুদীপ্ত ফোন করেছিল।
কৌশিকি ফোন ঘোরাতেই সুদীপ্ত বলল;
'কোথায় ছিলে?ক্লাসে?'
'হ্যা, খেয়েছো?,ডিউটি যাবার আগে একবার ফোন করো।কাল মানদা আসবে না।ঋতমের আবার সকাল স্কুল।কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না!'
'কাল দিনটা না হয় ছুটি নিয়ে নাও।'
'তাই করতে হবে,'
'জানো রাঁচিতে খুব বৃস্টি হচ্ছে।'
তবু ভালো।এখানে গরমে আগুন ঝরছে।তোমার আবার ঠান্ডার ধাত আছে সাবধানে থেকো।
কৌশিকির সাথে সুদীপ্তর ফোনে কথা খুব অল্প সময় হয়।ফোনটা কাটবার পর চারুদি নীচুস্বরে বলল,'শুনেছিস তমালিকার আর মৃন্ময়ের ব্যাপারটা?'
চারুদি গসিপ ভালোবাসে,কৌশিকি ভালো করেই জানে।কৌশিকির অবশ্য গসিপ একেবারেই না-পসন্দ।তমালিকা কৌশিকির কলিগ,ইংরেজী বিভাগের।ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের আর এক অধ্যাপক মৃণ্ময়ের স্ত্রী।সম্প্রতি তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে একথা বহুবার কৌশিকি চারুদির মুখ থেকে শুনেছে।তমালিকার এক্সট্রাম্যারিটাল এফেয়ার আছে।
চারুশীলা ফুসফুসিয়ে বলল,'ওদের সামনেই ডিভোর্স।'
কৌশিকি মৃন্ময় দা'র কথা ভাবছিল।বেশ হাঁসিখুশি মানুষ।তমালিকাও তাই।ওদের জীবনে এরকম নেমে আসাটা সত্যিই অকল্পনীয়।
 
****
বাড়ী ফিরবার সময় কৌশিকি দেখলো আকাশ মেঘলা হয়ে রয়েছে।সঙ্গে অবশ্য ছাতা রয়েছে।বাসে উঠেই কৌশিকি দেখলো লেডিস সিটে একটা ছেলে বসে আছে।কৌশিক সেদিকে যেতেই ছেলেটা উঠে গেল।কৌশিকি ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে সুদীপ্তকে ফোন করলো।ওপাশ থেকে সুদীপ্ত ব্যস্ত গলায় বলল 'হ্যাঁ আমি অফিস পৌঁছে গেছি।তুমি কোথায়?'
সুদীপ্তর আজ নাইট শিফট।নাইট শিফট থাকলে বিকেলেই তাকে অফিস পাড়ি দিতে হয়।
কৌশিকি বলল,'ঠিক আছে।আমি বাড়ী ফিরছি।'
বাস থেকে নেমেই কৌশিকি বুঝতে পারলো,বৃষ্টি দু-এক ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে।দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো কৌশিকি।কৌশিকিদের বাড়ীর কাছাকাছি খুব একটা বাড়ী নেই।ফ্লাই ওভার থেকে ফাঁকা কচুরিপানা ভর্তি মাঠ রাস্তা টা একটু ঘুরে দুএকটি নতুন বাড়ী ও একটি বড় কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে গেছে।ছাতাটা খুলে কৌশিকি এগিয়ে যেতেই রাস্তা থেকে চোখ পড়লো ফ্লাইওভারের তলায়।সকালের দেখা সেই পাগলাটে ভিখারিটা বসে রয়েছে আর একটি বাচ্চা মেয়ে খেলে বেড়াচ্ছে।মেয়েটির বয়স চার-পাঁচ বছর হবে।একটা ময়লা ফ্রক চুলগুলো ধূসর হয়ে গেছে।আবর্জনার ধারে কাছেই একমনে খেলছে।
 
রাতে খাবার পর বই পড়তে পড়তে ঘুমোন অভ্যেস কৌশিকির।আজ বৃষ্টিটা সারাদিন ধরেই হচ্ছে।একটু ঠান্ডা ঠান্ডা করছে।কৌশিকি ঋতমের গায়ে বেডকভারটা টেনে বাকিটা নিজের গায়ে টেনে নিল।সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা 'স্বর্নচম্পার উপাখ্যান' বইটা পড়ছিল সে।ঘুম আসতেই বেড সুইচটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়লো।তমালিকা ও মৃন্ময়দার কথা বারবার মনে হতে থাকলো।কোন এক মাড়োয়ারি ছেলের সাথে তমালিকার সম্পর্ক রয়েছে চারুদির কাছে জেনে ছিল।সত্যিই হয়তো হাসিখুশির আড়ালে তাদের সম্পর্কে জটিলতা ছিল।কৌশিকি ফেমিনিস্ট কোনো ধারণার বশবর্তী না হলেও পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যেরও সমর্থক নয়।তাই শুধু মৃণ্ময়ের প্রতি নয় তমালিকারও হয়তো মৃন্ময়দার সাথে সম্পর্কে কোনো সুখ ছিল না এই ভারসাম্য বোধ কাজ করছিল।ভাবতে ভাবতে চোখ জুড়িয়ে গেল।পাশে ঋতম ঘুমের মধ্যেই হাত পা ছুড়ে পাশ ফিরল।
*****
মানদা না আসায় কৌশিকি আজ ছুটি নিয়েছে।ঋতমের সকাল স্কুল।দুপুরে সারাদিন দস্যিপনা করে বেড়াচ্ছে।সকাল ১১টা নাগাদ কৌশিকি স্নান সেরে একটা হালকা সবুজ সুতির শাড়ি পরে নেয়।বাড়ীর সামনে বাগানে বেশ কিছু গাছ ঝোপের মত হয়ে রয়েছে সেখানেই বল নিয়ে দাপাদাপি করছে ঋতম।কৌশিকি বই হাতে চেয়ার নিয়ে বসলো বারান্দায়।
ঝোপের মধ্য থেকে ঋতমের গলা পেল কৌশিকি।কার সাথে কথা বলছে ও।কৌশিকি গ্রিল খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখলো,পেছনের অব্যবহৃত আগাছা ভরা গেটে দাঁড়িয়ে কাছে একটি বাচ্চা মেয়ে।মেয়েটিকে চিনতে ভুল হল না কৌশিকির।কালকের সেই ফ্লাইওভারের তলায় খেলতে দেখেছিল এই মেয়েটাকে।কৌশিকি এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো 'কি নাম তোর?'
মেয়েটি যেন লজ্জা পেল।কৌশিকি বলল ভেতরে আয়।বলতেই মেয়েটি গেটটা খোলবার চেষ্টা করলো।এই গেট ব্যবহার হয়না বলে তালা ঝোলানো থাকে।কৌশিকি মেয়েটিকে সামনের গেট দিয়ে আসতে বললো।
মেয়েটি আসতেই কৌশিকি দেখলো রোগা লিকলিকে চেহারার মেয়েটি।কালকের সেই ময়লা জামাটাই পরা।ঋতম বলে উঠলো,
'মা দেখো ওর জামা ছেঁড়া'
কৌশিকি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল 'কি নাম?'
মেয়েটি বললো, 'মুস্কান'
কৌশিকি মেয়েটির দিকে হেসে বললো 'কোথায় থাকিস?'
'ব্রিজ কা নীচ মে'
কৌশিকি বুঝলো মুস্কান বাংলা বুঝলেও বলতে পারে না।
ঋতম আর মুস্কানকে খেলা করতে দিয়ে নিজে বাড়ীর মধ্যে চলে গেল।
কৌশিকি ফ্রিজ থেকে দুটো আপেল এনে একটা মুস্কানকে ও একটা ঋতমকে দিল।
বই পড়তে পড়তে ১২:৩০ বেজে গেছে।কৌশিকি বইটা রেখে উঠতেই দেখলো মুস্কান আর ঋতম এখনও খেলা করছে।ওদের দুজনের ভাব জমেছে।ঋতমের বয়স ছয় আর মুস্কান আর একটু ছোট হবে।ঋতম খেলার সঙ্গী পায়না।তাই মুস্কানকে পেয়ে তার আনন্দ ধরে না।কৌশিকি ঋতমকে খাবার জন্য ডাকতেই মুস্কানের মন শুকিয়ে গেল।ঋতমও খেলার সঙ্গী হারিয়ে ব্যথিত হয়ে পড়েছে।কৌশিকি মেয়েটিকে বলল দুপুরে খাবি কখন?
মেয়েটি বললো, 'আব্বা আনে কা বাদ'
তোর মা কোথায়?
মুস্কান কেমন যেন একটা মুখে বললো,'নেহি হ্যায়।'
কৌশিকি বুঝতে পারলো কালকের যে লোকটাকে পাগল ভাবছিল সে আসলে মুস্কানের আব্বা।কৌশিকি জিজ্ঞেস করলো 'তোর আব্বা কি করে?'
মেয়েটি ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললো 'ভিখ মাঙনে গ্যায়া হ্যায়।'
কৌশিকির মেয়েটির উপর দয়া হলো বললো 'আমার সাথে আয়'
মুস্কান কৌশিকির পিছু পিছু আসবার পর কৌশিকি বারান্দায় ওকে বসতে বলে ভেতরে চলে গেল।নীচতলায় বড় বারান্দায় মেয়েটি বসে আছে ঋতম মায়ের সাথে ছাদে গিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে পড়লো।কৌশিকি খাবার বেড়ে ঋতমকে দেওয়ার পর নীচে খাবারের থালা মুস্কানকে এনে দিল।মুস্কান লাজুক ও লোভাতুর অবস্থায় খাবারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কোনটা আগে খাবে ঠিক করতে পারছে না।তার শিশুসরল অভিবাপ্তিতে কৌশিকি মুগ্ধ হয়ে দেখছিল।বড় দয়া হচ্ছিল মেয়েটির প্রতি।
ঋতমের ডাকে সম্বিৎ পেয়ে কৌশিকি সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।যখন নীচে এলো দেখলো মেয়েটি নেই।খাবারের থালাটাও নিয়ে চলে গেছে।
 
খুরশেদ ফ্লাই ওভারের তলায় পানাভর্তি খালের জলে স্নান সেরে এসে ছেঁড়া লুঙ্গিটা পরে নিল।পুঁটলি থেকে এক এক করে পয়সা গুন ছিল।একটা পুরোনো একটাকার অচল পয়সা কেউ দিয়েছে।মুখ দিয়ে 'বেহেনচোদ' অশ্লীল শব্দ বেরিয়ে এলো।প্রায় এক বছর ধরে ভিক্ষা করছে সে।কত লোকের নির্দয় ব্যবহার দেখেছে।মাঝে মাঝে তার মনে হয় কষিয়ে লাথি চালিয়ে দিতে।তার বাঁ পা'টা যখন ছিল তখন তাকে এরকম ভিক্ষা করতে হত না।বিহার থেকে যখন কলকাতায় এসেছিল বয়স কত হবে তার।এই ২৩-২৪।তার তাগড়াই চেহারা দেখে রাজেশ সাউ তাকে কুলির কাজটা পাইয়ে দিয়েছিল।শিয়ালদা স্টেশনে কুলির কাজ করবার সময় তাকে সব কুলিরা সমীহ করত।পেশীবহুল ৬'ফুট লম্বা, তামাটে রঙের গায়ে কত জোর ছিল তার।বিহার গিয়ে বিয়ে করেছিল জোবেদাকে।জোবেদার তখন বয়স ষোলো।কুলিগিরি করে তার আর জোবেদা সংসার চলে যেত।রেললাইনের ধারে ঝুপড়িতে তার সংসার ছিল।প্রায় দশ বছর পরেও তাদের কোনো বাচ্চা না হওয়ায় লোকে জোবেদাকে 'বাঁজ' বলত।তাতে কোনো দুঃখ ছিল না খুরশেদের।খুরশেদের শরীরী চাহিদা বেশি ছিল।জোবেদা কখন তাকে ফেরায়নি।সবসময় তৃপ্ত রাখতো তাকে।এরকমই এক গরমে কাজ সেরে ফিরছিল খুরশেদ রেলবস্তির ধারে জটলা দেখে খুরশেদ এগিয়ে গেল।দেখলো রাস্তার ধারে জোবেদার দেহ পড়ে আছে।বস্তির লোকেরা ডাক্তার নিয়ে আসতে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলো।জোবেদার নাকি কঠিন রোগ ছিল,একথা বিশ্বাস করতে পারেনি খুরশেদ।
খুরশেদের জীবন বদলে যেতে শুরু করলো সেদিন থেকে।বিড়ি ছাড়া যে খুরশেদের আর কোনো নেশা ছিল না।সেও শুড়িখানা যাওয়া শুরু করলো।রাতে টলতে টলতে বাড়ী ফিরত সে।তার বিরাট চেহারার জন্য সকলে তাকে ভয় পেত।শুড়িখানায় পেত মঞ্জু আসমা,মংলা,তপতি এদের।এদের মধ্যে মঞ্জুর কাছেই খুরশেদ বেশি যেত।খুরশেদের পাশবিক কাম তৃপ্ত করতে পারতো মঞ্জু।সারাদিনের রোজগার ঢেলে দিত মঞ্জুর কাছে।মদ গিলে বাড়ী ফিরবার সময়ই দেখা হত ফয়জলের সাথে।ফয়জলই একদিন খুরশেদকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়।ফয়জলকে ছোট ভাইর মত দেখেছে খুরশেদ।তার প্রস্তাব ফেলতে পারেনি।আনোয়ারা কে যেদিন দেখেছিল সে,সেদিন অবাক হয়ে গেছিল খুরশেদ।রোগাটে শ্যামলা চেহারার আনোয়ারা ফয়জলের বিহারের গাঁ থেকে এসেছে।খুরশেদ ফয়জলকে বলেছিল, 'ইস উমর কি লেড়কি অর ম্যায়!'
খুরশেদের বয়স তখন চল্লিশ আর আনোয়ারা আঠারো।নিকার প্রথম রাতে আনোয়ারা ঘোমটা টেনে বসেছিল।খুরশেদ কোনো বাক্যালাপ ছাড়াই আসতে আসতে আনোয়ারার গা থেকে এক একটা পোশাক খুলে নিয়েছিল।বুকের কাছে চোখ পড়তেই দেখলো পেয়ারার মত দুটো স্তন।ধাতব হাতে মুচড়ে ধরেছিল খুরশেদ।এক ঝটকায় নীচের অংশ উন্মুক্ত করে যোনিতে হাত ঘষতে থাকলো।শ্যামলা ময়লাটে গায়ের রং আনোয়ারার বুকের কাছটা তুলনামূলক উজ্জ্বল ছিল।আনোয়ারা টের পাচ্ছিল একটা নরপশু তার উপর চেপে রয়েছে।মুখ বুজে উপভোগ করবার চেষ্টা করছিল সে।বেশি সময় নেইনি খুরশেদ নিজের লৌহদণ্ডের মত দীর্ঘ কালো লিঙ্গটা গেঁথে দিল যোনিতে।সতীচ্ছদা ভেদ করে উথিত হল লিঙ্গ খানা।প্রথমদিনের যন্ত্রনা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার।ধীরে ধীরে শিখে গেছিল কি করে এই পুরুষকে সুখী করতে হয়।নতুন বউ পেয়ে খুরশেদ বাড়ী ফিরত তাড়াতাড়ি।এসেই ঝাঁপিয়ে পড়তো আনোয়ারার উপর।খুরশেদের ছিল একধিক বিকৃত কামনা।আনোয়ারা বাধা দিত না।চলত উদোম যৌনক্রিয়া।ঝুপড়ির মধ্যে বয়ে যেত কামানলের তীব্র ঝড়।আনোয়ারা গর্ভবতী হবার পর খুরশেদ যে আনন্দ পেয়েছিল তা সে জীবনে পায়নি।অষ্টাদশী আনোয়ারার পেটটা ফুলে উঠছিল ধীরে ধীরে।গর্ভাবস্থায়ও আনোয়ারা খুরশেদের যৌনখিদেকে অতৃপ্ত রাখেনি।মুন্নির জন্ম হবার পর খুরশেদ তার ভালো নাম রেখেছিল মুস্কান।আসতে আসতে মুস্কান বড় হচ্ছিল খুরশেদের জীবনে সুখের আলোক বইছিল ধীরে ধীরে।খুরশেদ মনে করত জোবেদাই তাকে এসব দিচ্ছে।যা সে নিজে দিতে পারেনি।মুস্কান যখন হাঁটতে শিখেছে,আনোয়ারা আবার গর্ভবতী হল।খুরশেদ চেয়েছিল তাদের একাধিক বাচ্চা।বস্তিতে পুরুষ মহলে একধিক বাচ্চা থাকা যেন গৌরবের।তাতে পুরুষের যৌন ক্ষমতার প্রমান হয়।আনোয়ারা প্রথমটা রাজি ছিল না।তবে আনোয়ারা জানতো খুরশেদের রাগের কথা।মুখের অশ্লীল শব্দে ঝড় তুলতো খুরশেদ।খুরশেদ সেদিন কাজে গেছিল,পেটের ব্যথা ওঠায় ফয়জল ও তার বউ সালমা অন্তঃসত্বা আনোয়ারা কে হাঁসপাতালে ভর্তি করলো।খুরশেদ খবর পেয়ে হাঁসপাতালের বাইরে পায়চারি করছিল।
কিছুক্ষণ পর আনোয়ারা বিবি নাম টা শুনে,খুরশেদ এগিয়ে গেল।
'হাঁ সাব বলিয়ে,ম্যায় হু উসকা পতি'
ডাক্তার যা জানালো,তা শুনে খুরশেদের পড়ে যাবার উপক্রম।আনোয়ারা এবং বাচ্চা দুজনেই মৃত। ফয়জল ধরে ফেলল খুরশেদকে। ভারী দীর্ঘ চেহারার খুরশেদকে সামলাতে পারছিল না ফয়জল।বলল 'খুরশেদ ভাই শান্ ত হুইয়ে'
খুরশেদ মুন্নিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।
 
ফয়জলের বিবি সালমাই মুন্নির দেখাশোনা করত।খুরশেদ কাজ থেকে ফিরে মেয়েকে কোলে তুলে নিত।এভাবেই চলছিল খুরশেদের জীবন।খুরশেদ তার জীবনের কামলালসা কে বর্জন করেছিল মুন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে।খুরশেদ নাম সহি করতে জানে ও অক্ষর চেনে তাও হিন্দিতে।ফয়জলের বউ সালমা ফোর পর্যন্ত পড়েছে বাংলায়।ছোট্ট মুন্নিকে অ আ শেখাতে লাগলো।
বৃষ্টির দিনে রেল লাইনের পাশে জল জমে থাকতো।শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল খুরশেদের,কাজে যেতে মন ছিল না সেদিন।মুন্নি ফয়জলের বাড়ীতে তার মেয়ের সাথে খেলছে।বৃষ্টিটা কমতেই খুরশেদ বিড়ি ধরিয়ে রেল লাইন পার হচ্ছিল।তারপর..আর মনে নেই তার যখন জ্ঞান ফিরলো বাঁ পা টা নেই।ব্যান্ডেজ বাঁধা।কিছু দিন ফয়জল ও তার বিবি খুরশেদের দেখাশোনা করত।ফয়জলও খুরশেদের মত কুলি।ধীরে ধীরে খুরশেদ সুস্থ হয়ে উঠতে ফয়জল তার গরীবের সংসারে আর দায়ভার নিতে রাজি হয়নি।ঝুপড়ি ত্যাগ করে মুন্নিকে নিয়ে ভিক্ষে করতে বেরিয়ে এসেছিল খুরশেদ।সারাদিনে এইভাবেই চলে খুরশেদের। রেলকতৃপক্ষ তার ঝুপড়িটাও ভেঙে দিয়েছে।বলতে বলতে খুরশেদের বয়সও প্রায় ৪৫-৪৬।জীবনের অনেক ঝড় দেখেছে সে।তবু দমেনি সে।দীর্ঘ চেহারার পাথরের মত খুরশেদ চলে এসেছে বস্তি থেকে দূরে। এই নির্জন ফ্লাইওভারের তলায় পলিথিন ও কাগজের পেটি দিয়ে সে থাকবার জায়গা বানিয়েছে।তার একমাত্র সম্বল এখন মুন্নি।খুরশেদ এখনও স্বপ্ন দেখে মুন্নি একদিন বড় হবে,লেখাপড়া করবে।বড়লোকদের দেখলে রাগ-হিংসা হয় খুরশেদের।
'আব্বা! আব্বা!' ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল খুরশেদ।দেখলো মুন্নির হাতে থালা ভর্তি কিছু একটা...
 
মুন্নির হাতে থালা দেখে,খুরশেদ বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল
'থালি মে ক্যায়া হ্যায় মুন্নি?কাঁহা সে লে আয়া?'
মুন্নির চোখে মুখে আনন্দে ছাপ,'আব্বা ও জো ঘর হ্যায় না,উহিসে দিয়া হ্যায় এক অওরত'
খুরশেদ দূর থেকে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,'তু ইতনা দূর কিউ গ্যায়াথা,তুঝে ক্যাহি নেহি জানেকো বোলাথা না না?'
মুন্নি ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যেতে খুরশেদ হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো।
'চল বিটিয়া ক্যায়া লায়া হ্যায় দেখু তো'
খাবার দেখে লোভ সংবরন না করতে পারলেও খুরশেদ বুঝতে পারলো একটি বাচ্চার জন্য দেওয়া খাবারে তার আর হবে না।
সে মুন্নিকে খেয়ে নিতে বলতে মুন্নি চেঁটেপুটে খেতে থাকলো।
খুরশেদ দূরে একটা সস্তার হোটেল আছে সেদিকে রওনা দিল,সামান্য পয়সা দিলে তারা খাবার দেয় ভালোই।খুচরো কয়েনগুলো নিয়ে ভাঙানোর বিনিময় বাপ-বেটিতে পেট ভরে যায় দু-বেলা।
*******
সন্ধ্যে হয়ে আসতে দেখে কৌশিকি ছাদে মেলা কাপড় গুলো তুলতে উঠে দেখছিল মুক্ত আকাশের নীচে হাইওয়ে পর্যন্ত সবুজ পানা ক্ষেতের মত হয়ে আছে।ছেলেবেলায় কৌশিকির মামারবাড়ীতে পুজোর সময় গেলে এরকমই ধানক্ষেত দেখতে পেত।এই কচুরিপানার জমিও যেন তার স্মৃতি রোমন্থন করে তুলছে।বৃহত্তর কলকাতা শহরে এরকম নির্জনতা বেশ কম জায়গায়।আকাশ উড়ো মেঘ একপাশে কালো হয়ে রয়েছে।মেইনগেটের শব্দ পেয়ে কৌশিকি দেখলো গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে মুস্কান।কৌশিকি শাড়ীগুলো তুলে নীচে নেমে এসে মুস্কানকে দেখে বলল,'কোথায় চলে গেলি তখন?'
মুস্কান বলল,'আব্বা কে পাস,একসাথ খানে কে লিয়ে'
কৌশিকি অবাক হয়ে গেল ঐটুকু মেয়ের অমন আচরণে।গেট খুলে ভেতরে ডাকলো তাকে।কি যেন মনে হল কৌশিকির,মুস্কানকে নিয়ে গিয়ে মিষ্টি ও ফল খেতে দিল এত বড় ঘর মুস্কান প্রথমবার হাঁ করে দেখছিল।ঘুম থেকে উঠে ঋতম মুস্কানকে দেখতে পেয়ে ভীষন আনন্দিত।দুজনে খেলতে শুরু করে দিতে,কৌশিকি বলল 'এখন নয় মুস্কান তোর আব্বা খুঁজবে তোকে তুই চলে যা।কাল দুপুরে আসিস'
পরদিন কৌশিকির কলেজ ছিল না।কলেজ না থাকলেও কৌশিকির সকালে ওঠা অভ্যেস।এই অভ্যেসটা পুরোনো।সকালে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া তার অভ্যেস ছিল।এখন আর সেসব চর্চা হয় না।মাঝখানে ক্লাসিক্যাল শিখেছিল তাও আর এখন বন্ধ্।সুদীপ্ত অনেকবারই বলেছিল নতুন করে শুরু করতে। আর হয়ে ওঠেনি।
দুপুরে মুস্কান আর ঋতমের খেলাধুলায় ঘরটা যেন একটা প্রাণ পাচ্ছিল।নির্জনতা প্রিয় কৌশিকির কাছে বাচ্চা দুটির খেলাধুলায় বাড়ীময় অস্থিরতা বেশ ভালোই লাগছিল।
মানদা মুস্কানকে দেখে একটু বিরক্ত হয়েই বলল,'বৌদি অমন উটকো কাউকে ঘরে ঢুকতে দাওনি গো'
'কেন তোর কি ক্ষতে করছে ও'কৌশিকি হেসেই বলল।
পরের মাস থেকে মানদা আর আসবে না।ওর বর টোটন ব্যারাকপুরে কারখানায় কাজ করে।ওদের বাড়ী বর্ধমানে,ওখানে চলে যাবে ওরা।তাই মানদা একটু বেশিই নজর দিচ্ছিল,এ সংসারে পুরোন কাজের লোক সে।ঋতমের জন্ম দেখেছে।কৌশিকিও জানে মানদা চলে গেলে তার বড় কষ্টই হবে।কৌশিকি রান্না বান্না সব কিছুই নিজে করতে পারে,তবে কৌশিকি কলেজ চলে গেলে ঋতমের দেখাশোনা করার জন্য একজন বিশ্বস্ত লোক রাখা দরকার।
****
গত একসপ্তাহ ধরে দুপুরে মুস্কান এখানেই খায়।মানদাকে বলে রেখেছে কৌশিকি।ছুটির দিনগুলোতে কৌশিকি উপভোগ করে ঋতম আর মুস্কানের খেলা।
কৌশিকি বসেছিল বাগানে বই নিয়ে।ঋতম আর মুস্কান খেলতে খেলতে হঠাৎ কৌশিকি শুনতে পেল মুস্কান এ-বি-সি-ডি করে ডাকছে।কৌশিকি অবাক হয়ে মুস্কানকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, 'তোকে কে শিখিয়েছে এসব?'
মুস্কান বলল, 'সালমা চাচী নে'
'কে সালমা চাচী?'
'যব বস্তি মে থে তব সালমা চাচীনে শিখায়া'
কৌশিকি আর কিছু কথা না বাড়িয়ে বলল, 'তুই পড়বি?'
'আব্বা ক্যাহেগি তো'
কৌশিকি বলল 'কাল তোর আব্বা কে নিয়ে আসিস'।
 
মুস্কান রাতে ফ্লাইওভারের তলায় শুয়ে শুয়ে গল্প করছিল তার আব্বার সাথে।মুস্কান তাই আব্বাকে বলল 'আব্বা ঋতম কি মা মুঝে পড়ানা চাহেতে হ্যায়'
খুরশেদ চাইতো মুস্কান একদিন লেখাপড়া করে বড় হোক।তার মত অক্ষর সহি জ্ঞান মাত্র নয়।
 
অনেকক্ষণ ধরেই ফোনটা বাজছিল।কৌশিকি রান্নাঘরে থাকায় ফোনটা ধরতে পারে নি।রান্নাঘর থেকে এসে ফোন ঘোরাতেই সুদীপ্ত ওপাশ থেকে বলল, 'রান্না হয়ে গেছে?'
ঘাম মুছতে মুছতে কৌশিকি বলল,'এই তো হল'
'ঋতম কোথায়?'
'ওই টিভিতে কার্টুন দেখছে,অফিস থেকে ফিরলে কখন?'
'এখনো ফিরিনি, রাস্তায়।তা সেই বাচ্চা মেয়েটির খবর কি?'
'জানো ঐ মেয়েটি মাত্র তিন বছর বয়স।এখনো ওর পুরো জীবন পড়ে আছে।ওকে আমি পড়াতে চাই।'
'তবে ভালই তো।তবে ওর বাবার অনুমতি নিও'
 
কৌশিকি কে যেকোনো ব্যাপারে এনকারেজ করে সুদীপ্ত।সুদীপ্ত জানে কৌশিকি স্বাধীনচেতা একজন বুদ্ধিমতি মেয়ে।তাই কৌশিকির যেকোনো কাজেই সে আস্থা রাখে।
*****
সকালে হঠাৎ করে মানদা কামাই করলো।কৌশিকি টোটনের ফোনে ফোন করতে মানদা জানালো সে সন্ধ্যেয় আসবে এখন তার ঘরে তার ননদ এসেছে।
সকালে স্নানের পর কৌশিকি গোলাপি একটা সুতির শাড়ি পরে নিল,সঙ্গে একটা সাদা ব্লাউজ। ঋতমকে স্কুল বাস থেকে নিয়ে এসে বাড়ীর দিকে এগোতেই ঋতম চেঁচিয়ে উঠলো মুস্কান বলে।
কৌশিকি দেখলো গেটের সামনে মুস্কান ও তার আব্বা দাঁড়িয়ে আছে।
 
গেটের কাছে মুস্কানের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিই খুরশেদ কৌশিকি চিনতে ভুল করলো না।দীর্ঘকায় চেহারা খুরশেদের পরনে একটা ময়লা ছেঁড়া লুঙ্গি।খালি গা।তামাটে বর্ণের পেশীবহুল দৈত্যাকার শরীর।গলায় ঝুলছে একটা ময়লা কালো ঘুমসিতে বাঁধা কয়েকটা মাদুলি।গাল ভর্তি দীর্ঘদিন না কাটা উস্কোখুস্ক ময়লা দাড়ি।মাথা ভর্তি ধূসর চুল।কুৎসিত মুখে অজস্র ব্রণর দাগ।লুঙ্গির আড়ালে যে বাঁ পা টা নেই তা আর কৌশিকির অজানা নয়।হাতে ধরা শক্ত মোটা লাঠি।কৌশিকি ভেতরে আসতে বলে এগিয়ে গিয়ে গেটটা খুলে দিল।
খুরশেদের নজর পড়লো কৌশিকির দিকে অমন ফর্সা অভিজাত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহিলার সাথে আগে সে কথা বলেনি।কৌশিকির কোমল ফর্সা শরীরের সাথে গোলাপি শাড়ি যেন মিশে গেছে।গহনা বলতে ফর্সা ঘামে ভেজা গলায় চিকচিক করছে সরু সোনার চেনটি।পরনের সাদা ব্লাউজ।দীর্ঘদিন ধরে কামবাসনায় অভুক্ত খুরশেদের নজর এক ঝটকায় দেখে নিচ্ছিল কৌশিকিকে।আঁচলে ঢাকা বুক দেখে বুকের উচ্চতা নির্নয় করা সম্ভব নয়।কমনীয় ফর্সা মুখে একটা মিষ্টি হাঁসি তাকে যেন আরো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তুলেছে।
কৌশিকি খুরশেদ কে বসতে বলতে খুরশেদ বাগানের সিমেন্টের চাতালে বসে পড়লো।
কৌশিকি বলল,'আপনার মেয়েটি কিন্তু ভীষণ মিষ্টি'
'ভাবিজি মা মরাহুয়া বেটি আছে হামার,আল্লার দয়ায় ভালো আছে'
'আপনার মেয়েটিকে আমি পড়াতে চাই,আপনি রাজি তো'
'ভাবি আমি গরীব আদমি,কাঁহাসে খরচা উঠাবো'
'আরে না না,আপনাকে চিন্তা করতে হবে না,আমিই ওর দায়ভার নেব,ও এখানেই থাকবে'
শুনে যেন খুরশেদের আনন্দ ধরে না।'ঠিক হ্যায় ভাবি আপনি যা বলবেন ওহি হবে'
'তাহলে আজ থেকে ও এখানে থাক?'
'ঠিক হ্যায় ভাবি,লেকিন আমি ওর সাথে দেখা করতে আসবো'
'ঠিক আছে,নিশ্চয়ই।আপনার মেয়ে এখানে ভালো থাকবে।'
 
মুন্নিকে ছেড়ে আসতে মন সাধ দিচ্ছিল না খুরশেদের।ওর একমাত্র সম্বলই তো মুন্নি।তবু মুন্নির ভালোর কথা ভেবে নিশ্চিন্তই হল।
 
********
কৌশিকি মুন্নিকে স্নানঘরে নিয়ে গিয়ে সাওয়ার তলে দাঁড় করাতে মুন্নির আনন্দ ধরে না।কৌশিকির ভালো লাগছিল একটা সহজ সরল নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়ের আনন্দ দেখে।স্নানের পর ঋতমেরই একটা গেঞ্জি পড়তে দিল কৌশিকি।গেঞ্জিটা ওকে বড় হয়ে গেছিল তবুও নতুন পোশাক মেয়ে মুস্কানের মুখে হাসি।সঙ্গী পেয়ে ঋতমেরও বেশ মজা হচ্ছিল আজ সে কতই খেলবে।সন্ধ্যেবেলা কৌশিকি মুন্নিকে পড়াতে গিয়ে অবাক হল মেয়েটি ঝট করে সব শিখে যাচ্ছে।তবুও ভালো স্কুলে দিতে হলে আগে তাকে প্রিপিয়ার করে নিতে হবে।
 
রাতে খুরশেদের ঘুম আসছিল না।প্রতিদিন মেয়ের সাথে গল্প করতে করতে ঘুমায়।বারবার প্রশ্ন আসছিল মনে,মুন্নি ভালো থাকবে তো।পরক্ষনেই ভাবছিল,কৌশিকির মত মানুষের কাছে নিশ্চই ভালো থাকবে।কৌশিকির কথা মনে আসতেই তার চোখের সামনে ভাসতে শুরু করলো সুন্দরী কৌশিকির অপরূপ রূপ।ফর্সা গ্রীবাদেশ,মুখের মিষ্টি নরম সৌন্দর্য।খুরশেদের কামবাসনা জাগ্রত হচ্ছিল।লুঙ্গির মধ্যে পুরুষ অঙ্গটা কঠিন হয়ে উঠছিল।বড়লোক বাড়ীর শিক্ষিতা সুন্দরী ফর্সা কৌশিকির কথা ভেবে তার শরীরে যেন চুঁয়ে চুঁয়ে ঘাম বের হচ্ছিল।খুরশেদের মত উগ্রকামী পুরুষ প্রায় এক বছরের মত কোন যৌন সঙ্গম করেনি।নিজেকে রোখার ক্ষমতা ছিল না তার।লুঙ্গির তলায় হাতটা চলে গিয়ে মুঠিয়ে ধরলো লিঙ্গটা।মুখের সামনে তীব্র হচ্ছিল গোলাপি শাড়ি সাদা ব্লাউজ পরিহিত কৌশিকি।লিঙ্গটা ধরে সজোরে হাতটা ওঠা নামা করতে থাকলো সে।একজন অভিজাত শিক্ষিতা নারীকে কল্পনা করে সে হস্তমৈথুন করছে ফ্লাইওভারের তলে থাকা ন্যাংড়া ভিখারি খুরশেদ।দীর্ঘক্ষণ পর হাত গড়িয়ে নেমে এলো বীর্যস্রোত।নিস্তেজ হয়ে পড়লো তার শরীর।
সকালে ঘুম ভাঙতেই খুরশেদের আগের রাতের কথা মনে পড়তেই মুখে হাসির রেখা এলো আপন মনেই।আজ তার আর ভিক্ষা চাওয়ায় মন নেই।সকাল বেলা পড়ে থাকা একখান বাসী পাউরুটি জল দিয়ে খেয়ে বিড়ি ধরালো সে।বেলা বাড়তেই রোদ বেরোচ্ছে।
মানদাকে বলল কৌশিকি দুপুরে ঋতম আর মুস্কানেকে নজরে রাখতে।তাদের সময়ে খাবার দিতে।মুস্কানকে যেন হেলায় না রাখে।মানদা একটু বিরক্ত হয়েই বলল,'কি দরকার ছিল বৌদি এরকম ভিখারির মেয়েকে এনে রাখার?'কৌশিকি কোনো জবাব না দিয়ে বের হচ্ছিল কলেজের জন্য। কৌশিকি একটা গাড় নীলচে কালো পাড়ের সিল্কের শাড়ি পরেছে।কাঁধে ব্যাগ আর ছাতা নিয়ে বাস ধরবার জন্য বেরিয়ে গেল।ফ্লাইওভারের তলায় বিড়ি টানছিল খুরশেদে।কৌশিকিকে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দূর থেকে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিল সে।পেছন থেকে কালো ব্লাউজে ঢাকা পিঠের অনাবৃত ধবধবে ফর্সা অংশে নজর আটকে গেল তার।ব্লাউজের তলায় কোমর কাছটা অনাবৃত থাকায় মৃদু ভাঁজে জমে থাকা বিন্দু ঘাম ও নজর এড়ায়নি তার। লুঙ্গির উপরে দিয়ে অজান্তেই হাতটা চলে গেল।খামচে ধরলো লিঙ্গটা।মনে মনে বলতে থাকলো 'বেটা খুরশেদ ইয়ে বড়েঘরকি পড়িলিখি অওরত তেরে লিয়ে নেহি হ্যায়, তু ভিখারি হ্যায়,তেরে লিয়ে ইয়ে দেখনা হি কাফি হ্যায়'।
কৌশিকি বাস ধরে চলে যাবার পর।খুরশেদ আর সময় নষ্ট করেনি।সোজা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো লাঠিতে ভর দিয়ে।
 
খুরশেদ অপেক্ষা করছিল কবে কৌশিকির ছুটি রয়েছে।সেদিনই সে মুন্নির সাথে দেখা করতে যাবে।শুধু মুন্নির সাথে দেখা করা না,কৌশিকিকেও একটু কাছ থেকে দেখতে পাওয়ার ইচ্ছা তার ছিল।
মুন্নি মাত্র তিনদিনেই নামতা শিখে ফেলেছে,ইংরেজিতে এ ফর আপেল ও পড়ছে।কৌশিকিদের কলেজে গরমের ছুটি সামনের সপ্তাহেই পড়বে।কৌশিকি চেয়েছিল এসময় সুদীপ্ত বাড়ী আসুক।তবে কোথাও একটা বেরিয়ে আসা যাবে।কিন্তু সুদীপ্ত আসতে পারবেনা জানিয়ে দিয়েছে।
'তারচেয়ে কৌশিকি রাঁচিতে কয়েকটা দিন থেকে যাও না'
'না তোমার রাঁচিতে এসময় গরমে কেউ যায়'
'তা মুন্নি কে কি স্কুলে ভর্তি করলে?'
'না ও এখন একটু বাড়িতে শিখুক তারপর।'
 
কৌশিকি একবার সুদীপ্তর ওখানে গিয়েছিল।রাঁচি থেকে অদূরে বনভূমি ঘুরে এসেছিল।কিন্তু রাঁচির এই গরমে এসময়ে না যাওয়াই ভালো।
আজ কৌশিকির কলেজে নেই।খুরশেদ কৌশিকিকে বাস ধরতে আসতে দেখেনি।খুরশেদ নিশ্চিত হল তবে আজ কৌশিকি বাড়িতে।দুপুরেই খুরশেদ হাজির হল কৌশিকির বাড়ী। মুন্নি দেখতে পেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো খুরশেদকে।কৌশিকি বেরিয়ে এসে বাপ-মেয়ের এই মেলবন্ধনে খুশি হচ্ছিল।খুরশেদের নজরে পড়লো কৌশিকির দিকে।কৌশিকি আজ একটা মেরুন কাজ করা শাড়ি পরেছে।গায়ে একটা কালো ব্লাউজ।সদ্য স্নান করে এসেছে কৌশিকি।স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে কৌশিকির গা থেকে সাবান ও শ্যাম্পুর গন্ধ খুরশেদের নাকে এসে পৌঁছাচ্ছে।কৌশিকির ব্লাউজগুলোর পিঠের অংশটা বেশি কাটা না থাকায় অনাবৃত অংশ কম দেখা যায়। যতটুকু দেখা যাচ্ছে তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না খুরশেদ।লুঙ্গির ভেতর অবাধ্য যন্ত্রটা যেন হার মানতে চায় না।
কৌশিকি বলল 'বসুন,এবার বলুন আপনার মেয়ে ভালো আছে তো?'
খুরশেদ মুস্কানের দিকে তাকাতেই ভুলে গেছিল।দেখলো মুন্নির পরনে একটা নতুন ফ্রক।
খুরশেদ বলে উঠলো, 'আপনাকে ধনিয়াবাদ ভাবিজি,আপনার মেহেরবানী আমি কখনোই ভুলবো না'
খুরশেদ যতটা সম্ভব কৌশিকিকে দেখে নিচ্ছিল।কাপড়ে ঢাকা কোমল নিতম্বদেশ কে মেপে নিচ্ছিল চোখ দিয়ে।
খুরশেদ মুন্নির সাথে দেখা করে বেরোতে যাবে,এমন সময় বাড়ীর ভেতর থেকে কৌশিকি বলে উঠলো,'আপনি আজকে খেয়ে যাবেন'
খুরশেদের মনে আনন্দ ধরে না।কোন কিছু কথা না বলে সে ঋতম আর মুস্কানের খেলা দেখতে দেখতে বাইরের বাগানের চাতালে বসে পড়লো।
নীচ তলার বারান্দার একটা থালায় করে কৌশিকি খাবার দিয়ে গেল।খুরশেদ এত সুস্বাদু খাবার কোনো দিন খায়নি।আজ মানদা না আসায় কৌশিকি নিজেই রেঁধেছে। খুরশেদ গোগ্রাসে গিলতে গিলতে বলে উঠলো 'ভাবিজি আপকা হাতের রান্না বহুত আচ্ছা আছে'
কৌশিকি বললো 'আর কিছু লাগলে বলবেন।'
খেতে খেতে খুরশেদের চোখ আটকে গেল কৌশিকির ডান স্তনে।বুকের ওপর শাড়ির আঁচল গেলেও পাশ থেকে ব্লাউজে ঢাকা পুষ্ট স্তন দেখা যাচ্ছে।কৌশিকির স্তন বিপুলাকার নয়,কিন্তু পরিণত মাঝারি।লাউয়ের মত উচু হয়ে রয়েছে কালো ব্লাউজে।খুরশেদ চোখ ফেরাতে পারছে না। কৌশিকি ঘুরে পড়তেই খুরশেদ চোখ ঘুরিয়ে নিল।কৌশিকি ছাদে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর একটা প্লেটে করে ভাত নিয়ে এসে খুরশেদকে দিল।ক্ষুধার্ত খুরশেদ বারণ করলো না।কৌশিকি ভাত দিতে ধাপতেই খুরশেদের নজরে পড়লো কাঁধের এক পাশে ব্রা'য়ের একটা স্ট্র্যাপ ব্লাউজ থেকে বেরিয়ে আছে।খুরশেদের শরীরে রক্তচলাচল যেন কয়েকগুন বেড়ে গেল।দুই পায়ের ফাঁকে অস্ত্রটা যেন মাথা তুলে উদ্যত হয়ে উঠছে।খুরশেদের লুঙ্গির ভেতরে কিছু পরা নেই,এমনিতেই বিরাট লিঙ্গ।খুরশেদ জানে যে করেই হোক এই অবাধ্য তরবারীকে বসে আনতে হবে।
 
********
প্রতিসময় এভাবেই চলছিল খুরশেদের। সপ্তাহে দুবার যেতে থাকলো মেয়েকে দেখতে।কুৎসিত দৈত্যাকার এই কামবভুক্ষু ভিখারিকে কৌশিকি ভালো মানুষ ভেবে কথা বলতো,খেতে দিত।লোকটাকে কৌশিকির ভালো মানুষ বলেই মনে হতে থাকলো।খুরশেদ প্রতি রাতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠলো।দীর্ঘ পুংদন্ড হস্তমৈথুন করে দিন কাটছিল তার।কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অধ্যাপিকা কৌশিকির পোশাক আশাকে সে কখনোই কোনো যৌন উত্তেজক শরীরী প্রদর্শন দেখতে পায়নি।তবু সুন্দরী কোমল কৌশিকি ও তার ব্লাউজে ঢাকা স্তনের পাশ থেকে দেখা কিংবা ফর্সা সামান্য অনাবৃত পিঠের অংশ দেখে খুরশেদ উন্মাদ হয়ে উঠছিল দিন দিন।রাত হলেই ফ্লাইওভারের তলায় নিজের বিশাল কুৎসিত লিঙ্গটাকে হাতে নিয়ে গোঙাতো 'ভাবিজি! ভাবিজি!'বলে।খুরশেদ আলী চিরকালের বন্য পুরুষ তার উন্মাদ বিকৃত কামনাকে তৃপ্ত করেছে কখনো জোবেদা কখনো আনোয়ারা।কিংবা বেশ্যাপাড়ার মঞ্জু,তপতিরা। কিন্তু একদা উপার্জনশীল কুলি মজুর আজ ভিখারি।কৌশিকি তার মত অশিক্ষিত ভিখারি প্রতিবন্ধী '. কুৎসিত লোকের কাছে দিবাস্বপ্নই।তবু সে কৌশিকির প্রতি কামনায় দিক দিক করে জ্বলছে।যে কৌশিকি সেনগুপ্ত সুন্দরী, অভিজাত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অধ্যাপিকা ও বিবাহিত একজন মহিলা।যে খুরশেদের বাচ্চা মেয়েটির প্রতি সদয় হয়ে তার দায়িত্ব নিয়েছে।
 
সারারাত বৃষ্টি হবার পর,পরের দিন রোদ বার হয়েছে। ঝড় জলের রাতে কোনো রকমে কেটেছিল খুরশেদের।ঘুম যখন ভাঙলো একটু দেরি হয়ে গিয়েছে।কড়কড়ে রোদে ঘাম দিচ্ছিল তার।গত পনেরো দিন ধরে তার কামনার আগুন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।আজ আর ভিক্ষা চাইতে যেতে ইচ্ছা নাই তার।কিন্তু না বেরোলে তাকে ভুখাই মরতে হবে।আজ যদি মুন্নিকে দেখার নাম করে পৌঁছে যায় তবে খাবার জুটবে।এই ভেবে খুরশেদ হাসতে হাসতে আপন মনে বিড়ি ধরালো।
 
মানদা কাজ ছেড়ে চলে গেছে বর্ধমান।কৌশিকির কলেজে গরমের ছুটি পড়েছে।কলেজ খুললেই চারুদির রিটায়ারমেন্ট।চারুদির জন্য মনটা কেমন করে কৌশিকির।চারুশীলা কৌশিকি কে আপন বোনের মত দেখেছে সর্বদা।কৌশিকির নিঃসঙ্গ জীবনে মানদা ও চারুশীলার অভাব বোধ হবে চিরকাল।ঋতমের দুপুরে স্কুল।মুস্কান একাই বসে ঘরে কার্টুন দেখছিল টিভিতে।কৌশিকি স্নান সেরে একটা সবুজাভ হলদে শাড়ি আর কালো ব্লাউজ পরেছে।গেটের শব্দ শুনে কৌশিকি মুন্নিকে বলল কে এসেছে দেখতে।মুন্নি জানলা দিয়ে দেখে চেঁচিয়ে বলল, 'আব্বা আয়া হ্যায় আন্টি'
কৌশিকি কে মুন্নি চাচী বলতে শুরু করলে কৌশিকি মুন্নিকে আন্টি বলতে শিখিয়েছে।
কৌশিকি নেমে এসে গেটটা খুলে দিয়ে হাসিমুখে বলল আসুন।খুরশেদ কৌশিকিকে দেখলেই মুগ্ধ হয়।অপরূপ কৌশিকিকে হলদে শাড়িতে আরো বেশি আকৃষ্ট করেছিল।চাতালে বসে মুন্নির সাথে গল্প করছিল খুরশেদ।কিন্তু নজর ছিল কৌশিকির দিকে। কৌশিকি বাগানের গাছে জল দিচ্ছিল।পাশ থেকে ফর্সা পেটের সামান্য ভাঁজ উঁকি দিচ্ছিল বুকের আঁচলের মধ্য দিয়ে।কালো ব্লাউজ কৌশিকির ফর্সা শরীরে ভালো মানায়।জল দেওয়া শেষ করে কৌশিকি মৃদু হেসে বলল 'মেয়ের সাথে গল্প করুন,আমি ওপর থেকে আসছি।'
 
খুরশেদের দেহে কামনার উদ্রেক প্রবল হয়ে উঠেছে।যৌনতার সমস্ত বাঁধ ভেঙে গেছে তার।এসময় আগুপিছু ভাববার সময় নেই।মুন্নিকে খুরশেদ বাগানে খেলা করতে বলে,নিজে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল।পা টিপে টিপে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়লো সে।সুদৃশ্য অমন উচ্চবিত্ত গৃহস্থের বাড়ী সে আগে দেখেনি।লাঠিতে ভর দিয়ে শব্দ না করে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল তার।
কৌশিকি রান্নার ঘরে জিনিসপত্র গুছিয়ে ফিরছিল ড্রয়িংরুমের দিকে।সিঁড়ির মুখেই ড্রয়িংরুম।হঠাৎ করে খুরশেদকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠলো সে।কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই খুরশেদ একধাক্কায় কৌশিকিকে দেওয়ালে সেঁটে দিল।কৌশিকি কিছু বলবার চেষ্টা করতেই খুরশেদ বলল,'চুপ করিয়ে ভাবিজি,মুঝে মত রোখিয়ে'
কৌশিকির মুখে হাত চাপা দিয়ে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরেছে খুরশেদ।খুরশেদকে ঠেলে ধাক্কা দিল কৌশিকি।ব্যার্থ হল তার প্রচেষ্টা।কৌশিকি পালানোর চেষ্টা করতেই খুরশেদ কৌশিকির গা থেকে শাড়িটা টেনে খুলে ফেলল।কৌশিকির পরনে কালো ব্লাউজ আর কালো সায়া ব্যতীত কিছু নেই।খুরশেদ বিচ্ছিরি লালচে হলুদাভ দাঁত কেলিয়ে শয়তানি হাসি হাসলো।একধাক্কায় আবার ঠেলে ধরলো কৌশিকিকে দেওয়ালের সাথে।কৌশিকি শেষ চেষ্টা করলো একবার।অপারগ হয়ে কৌশিকি হাত পা ছুড়ছিল।
'ছাড়ুন আমাকে,দয়া করে ছাড়ুন,আমি কিন্তু পুলিশে ফোন করবো'
কাম লালসায় ধর্ষক খুরশেদ কৌশিকির গালে সপাটে চড় মারতে,কৌশিকি নিস্তেজ হয়ে গেল।চিৎকার করা তার কাছে বৃথা।অমন নির্জন জায়গায় কেউ শুনতে পাবে না তার কথা।ততক্ষনে খুরশেদে তার নোংরা মুখটা জেঁকে ধরেছে কৌশিকির ফর্সা গলায়।ঘষে ঘষে ঘ্রান নিচ্ছে স্নানের পর কৌশিকির দেহের সুগন্ধি সাবানের।বিরাট চেহারার খুরশেদের কাছে বুক অবধি সেঁটে রয়েছে কৌশিকি।কুলির কাজ করা পাথরে হাতে ব্লাউজের উপর দিয়ে কৌশিকির নরম বাঁ স্তনটা চেপে ধরল খুরশেদ।কৌশিকির শরীরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল।খুরশেদের গা দিয়ে বিড়ির গন্ধের সাথে তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত ঘামের গন্ধ নাকে আসছে কৌশিকির।ব্লাউজের উপর দিয়ে নির্দয় ভাবে মাই চটকাতে চটকাতে একটা হাত দিয়ে সায়াটা তুলে ফেলল কোমর পর্যন্ত খুরশেদ।খুরশেদ কৌশিকির যোনিতে তার হাত দিতে গেলে কৌশিকি বাধা দিল,কিন্তু সেই বাধাদানের শক্তি অনেক দুর্বল ছিল।খুরশেদ তার কোমর থেকে লুঙ্গিটা ফেলে দিল।নিজের বিকদর লিঙ্গটা দ্রুততার সাথে গেঁথে দিল যোনিতে।কৌশিকির মনে হচ্ছিল যেন একটা বাঁশের মতো কিছু প্রবেশ করলো তার গোপনাঙ্গে।কোমরটাকে তীব্র গতিতে ধাক্কা দিতে থাকলো খুরশেদ।পাশবিক তীব্রতায় বিরামহীন ভাবে ধাক্কা মেরে চলেছিল সে। কৌশিকি টের পাচ্ছিল তার শরীর অবস হয়ে চলেছে।নোংরা ভিখারি খুরশেদের প্রতি ঘৃণায় সে একপাশে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।তীব্র গরমের নিশ্চুপ দুপুরে ঘরের মধ্যে একটাই শব্দ হচ্ছে: থাপ থাপ থাপ থাপ ।কৌশিকির চোখ ধীরে ধীরে বুজে আসছিল।তবে তা ক্রোধে নয়,অদ্ভুত ধর্ষকামের সুখে।নিজের অজান্তেই কৌশিকি আষ্টেপৃষ্ঠে কুৎসিত নোংরা খুরশেদকে জড়িয়ে ধরেছে।খুরশেদ অভিজ্ঞ পুরুষ, তার বুঝতে বাকি থাকলো না।স্তন দুটোকে খামচে ধরে সে আরো তীব্র গতিতে স্ট্রোক নিচ্ছিল।সারা পৃথিবী যেন থেমে গেছে এই নরনারীর কাছে।শিক্ষিতা,সুন্দরী,অধ্যাপিকা কৌশিকিরও কোনো বোধবুদ্ধি কাজ করছেনা।কৌশিকির ঘন ঘন শ্বাস খুরশেদের ঘাড়ে আছড়ে পড়ছিল।খুরশেদ মুখের মধ্যে পুরে নিয়েছে কৌশিকির গলায় থাকা সোনার চেনটি।উরুতে উরুতে ধাক্কায় সশব্দে কাঁপছিল দুটো শরীর। কোমর অবধি সায়া তোলা কৌশিকির দুই পায়ের ফাঁকে ধাক্কা মেরে চলেছে এক দৈত্যাকার ময়লা চেহারা।কৌশিকির শরীরটা হঠাৎ করে কেঁপে উঠলো।খুরশেদ তখনও একনাগাড়ে ঠাপিয়ে চলেছে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে।কিছুক্ষন পর কৌশিকির যোনি ভরে গেল খুরশেদের বীর্যরসে।উরু বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই রস।খুরশেদ সরে এসে লুঙ্গিটা পরে নিয়ে সেখানে একমিনিটও দাঁড়াল না।লাঠি নিয়ে ভর দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল।যাওয়ার সময় মুন্নির কপালে চুম দিয়ে সে বিদায় নিল।
কৌশিকি সেই একইরকম অবস্থায় বসে রইলো।তারপর মুখ দিয়ে যেন তার বমি বেরিয়ে আসবার উপক্রম।দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলল সে।শাওয়ারটা চালিয়ে দিয়ে সায়া ব্লাউজ পরা অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।মনের মধ্যে আগুন জ্বলছিল তার।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল।ধর্ষণ হবার পর সে যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে।নিজের উপর রাগ হচ্ছিল তার।
কি করা উচিত তার এসময়।পুলিশকে জানানো উচিত।নাকি সে সুদীপ্তকে জানাবে প্রথম।সুদীপ্ত তাকে কিভাবে নেবে।পুলিশ জানলে জানাজানি হবে সর্বত্র।ঋতম বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে।তার কাছেই বা কী বার্তা যাবে।অসহায় লাগছিল নিজেকে কৌশিকির।
 
কৌশিকি বাইরে আন্টি ডাক শুনতে পেল।কৌশিকি কোন সাড়া দিল না।স্নানঘর থেকে বেরিয়ে কৌশিকি একটা সাদা গাউন পরে নিল।নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো।মুন্নি সরল মুখে কৌশিকির দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।কৌশিকি মুন্নির উপর রাগ করতে গিয়ে পারলো না।একটা নিষ্পাপ শিশুর উপর রাগ করেই বা কী লাভ।কোনো কথা না বলে মুন্নিকে স্নান করে আসতে বলল।মাঝে মাঝে কৌশিকি মুস্কানকে স্নানে সাহায্য করত।আজ করলো না।মুন্নি একা একাই স্নান করে বেরিয়ে এলো।ফ্রকটা পরবার চেস্টা করছিল মুন্নি।কিন্তু কিছুতেই পারছিল না।হঠাৎ করে খেয়াল হল কৌশিকির।কৌশিকি জামাটা পরিয়ে দিতে মুন্নি খাবার টেবিলে বসে পড়লো।কৌশিকি রান্নাঘর থেকে খাওয়ার এনে বেড়ে দিল।মুন্নি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো, 'আন্টি আপ নেহি খাওগে?'
কোন উত্তর দিল না কৌশিকি।তার আর খেতে ইচ্ছে নেই।গা'টা কেমন যেন গোলাচ্ছে এখনও।
****রাত হয়ে গেছে অনেক।মুস্কান আর ঋতম ঘুমিয়ে গেছে।কৌশিকির চোখে ঘুম নেই।এমনিতে কৌশিকি কম কথা বলে,আজ সারাদিন যেন নিশ্চুপ হয়ে আছে।বাচ্চাদের সাথে কথা বলতেও তার কেমন বোধ করছে।চোখে মুখে একরাশ যন্ত্রনা।নিজেকে অপবিত্র মনে হচ্ছে।এত কুৎসিত নোংরা এক ভিখারি তাকে ধর্ষণ করেছে।এটা ভাবলেই তার গা গুলিয়ে ওঠে।বমি পায়।লোকটাকে বিশ্বাস করেছিল সে।সুদীপ্ত কে কি বলে দেওয়া উচিত।পরক্ষনেই মনে হল না,সুদীপ্ত তাকে ছোট মনে করবে।তার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বুদ্ধিমতি দিকটি যেটি সুদীপ্তর কাছে ছিল তা ধাক্কা খাবে।অথচ কোনো কিছুই কোনোদিন সুদীপ্তর কাছে সে লুকোয়নি।সারাদিনের খুঁটিনাটি ঘটনা কম কথায় সুদীপ্তকে জানানো তার অভ্যেস।সুদীপ্তও জানে কৌশিকি অল্পভাষী হলেও তাকে সবকিছু জানায়।
তবু সিদ্ধান্ত নিল কৌশিকি।না সে কাউকে জানাবে না।কোনোদিন সে ছাড়া এই অভিশপ্ত দিনের কথা আর কেউ জানবে না।কিন্তু মুন্নির আব্বা যদি আবার আসে! মুন্নি এখনো যে তার কাছে।কি করবে সে।মেয়েটার প্রতি মায়া পড়ে গেছে কৌশিকির।যতই হোক,লোকটা যদি আসে মুন্নিকে পাঠিয়ে দেবে।এখানে আর রাখবে না। এভাবেই মনস্থির করছিল সে।নিজেকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।কৌশিকি দৃঢ়চেতা মেয়ে।সে একজন উচ্চবংশীয় নারী,অধ্যাপিকা,একজনের স্ত্রী,মা।তাকে দৃঢ় হতেই হবে,ভেঙে পড়লে চলবে না।চোখ জুড়িয়ে আসছিল কৌশিকির।
********
 
একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙলো কৌশিকির।এরকম সচরাচর হয় না।গা' হাতটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল।ব্রাশ হাতে উঠে এসে দেখলো ড্রয়িং রুমে ঋতম বসে হোমওয়ার্ক করছে।একা একা উঠে পড়েছে তার ওইটুকু ছেলে।ব্রাশ করে এসে কৌশিকি ঋতমকে স্নানে নিয়ে গেল।ঋতমকে এখনও স্নান করিয়ে দিতে হয়।বেশির ভাগ সময় মানদা করিয়ে দিত।কৌশিকি ঋতমকে স্কুল ইউনিফর্ম পরিয়ে,ব্যাগটা গুছিয়ে দিচ্ছিল কৌশিকি।ঋতম বলল, 'মা বাপি কবে আসবে?'
'এখন বাপির কাজের চাপ আছে বাবা,ছুটি পেলে আসবে'
'তোমার যে এখন কলেজ ছুটি,বাপির নেই কেন?'
কৌশিকি হেসে ফেলল,'তোমার বাপির অফিস আর আমার কলেজে একসঙ্গে ছুটি হয় না'
 
স্কুল বাসে তুলে দেবার জন্য কৌশিকি ঋতমকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।কৌশিকি স্কুল বাস আসতেই ঋতমকে তুলে দিল।হাইওয়ে ধরে বাসটা চলে যাবার পর।কৌশিকির চোখ গিয়ে পড়লো ফ্লাইওভারের নীচে।না কেউ কোথাও নেই।এমনকি খুরশেদের ঝুপড়িটাও নেই।মনে মনে নিশ্চিন্ত হল কৌশিকি।কিন্তু ভাবলো মুন্নির কি হবে।মুন্নিকে দেখতে নিশ্চই আসবে।না ওরকম নোংরা লোকের নিজের মেয়ের প্রতিও নিশ্চই কোনো মায়া নেই।তাই পালিয়েছে ভয়ে।
কৌশিকি বাড়ী আসবার পর একটু নিজেকে মানসিক দৃঢ় মনে হচ্ছিল।ভুলে যেতে হবে তাকে সেই অভিশপ্ত দিন।
 
সাতদিন কেটে গেছে।কৌশিকি নিজেকে আস্বস্ত করেছে ভুলে যাবার জন্য।আজ সকালটা অনেক বেশি ফুরফুরে লাগছিল।আকাশ পরিচ্ছন্ন তার সাথে মনও অনেক বেশি সংকটমুক্ত।সকালে ফোনটা বেজে উঠতে মুন্নি চেঁচিয়ে উঠলো, 'আন্টি ফোন বাজরাহী হ্যায়'।মুস্কানের পড়াশোনার অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে।মুস্কানের আব্বার ঘৃণ্য কীর্তি দিয়ে মুস্কানকে বিচার করেনি কৌশিকি।কৌশিকি ফোনটা ধরতেই,ওপাশ থেকে চারুশীলার গলা,
'কিরে কি করছিস?'
'আরে চারুদি! বলো কেমন আছো?'
'ভালো আছিরে।ভাবছি আজই একবার তোর ওখানে যাবে।ইউএসএ চলে গেলে আর কি দেখা হবে রে, তা সুদীপ্ত এসেছে নাকি?'
'না ও তো জানো ছুটি পায় না।তুমি কখন আসবে চারুদি?'
'বিকেলে আসবো ভাবছি'
'ধ্যাৎ এলে দুপুরেই এসো খাওয়া-দাওয়া করে যেও'
চারুশীলা এর ওর বাড়ী ঘুরতে ভালো বাসে।রসিক মহিলা।তাই বলল,'তবে ঠিক আছে'
কৌশিকির মনটা যেন আরো ভালো হয়ে গেল।চারুদির সাথে অনেকদিন পর দেখা হবে।চারুদির বকবক শুনতে কৌশিকির বেশ ভালো লাগে।কলেজের স্টাফেদের নিয়ে বিভিন্ন গল্প,তার আত্মীয়দের গল্প,নানা গল্পে চারুদির ভান্ডার শেষ হয় না।
 
কৌশিকি এখন নিজেই বাজার করে।আগে ওসব মানদাই সামলাতো।দায়ে পড়ে কৌশিকিকেও বেশ কয়েকবার বাজার যেতে হত বটে তবে সে হাতে গোনা।ঋতম স্কুলে গেছে।মুস্কানকে বাড়ীতে রেখে কৌশিকি বাজার বেরোলো। হাইওয়ের ধার দিয়ে সামান্য গেলেই দু একটা অটো মেলে।কৌশিকি হাইওয়ের কাছে আসতেই ফ্লাইওভারের তলায় চোখ গেল।দেখলো, না কেউ নেই।কৌশিকি স্নান সেরে রান্নার কাজে লেগে গেল।'ইস! মানদাটা থাকলে বেশ ভালোই হত।আপাতত অনেক রান্না করে খাওয়ানো যেত চারুদিকে'।
 
চারুশীলা এসে মুস্কানকে দেখে অবাক হল।বলল,'এ কে রে কৌশিকি?'কৌশিকি বলল বোস আগে, পরে সব বলছি।কৌশিকির রান্নার কাজ সারা হয়ে গেছে।দু কাপ চা এনে চারুদির হাতে কাপটা দিয়ে নিজে বসলো।মুন্নির সম্পর্কে একেএকে সবকথা বলল কৌশিকি।শুধু চেপে গেল সেই দিনটির কথা।চারুশীল বলল,'ঠিক করেছিস।এজন্যই তোকে আমার এত ভালো লাগে।'তারপর মুন্নির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো 'কি নাম তোর?'
মুন্নি লজ্জা পাচ্ছিল।কৌশিকি সাহস দিয়ে বলল 'বলে দে তোর নাম'
মুন্নি আদুরে গলায় বলল, 'মুস্কান'
চারু মুন্নিকে কাছে টেনে নিল।বলল, 'ভারী মিষ্টি মেয়ে তো'
সারাদিন কত কথা চলল চারুশীলার সাথে।বেশির ভাগটাই চারুদি বলছিল কৌশিকি শুনছিল।
ঋতম স্কুল থেকে ফেরার পর চারুমাসি বলে কোলে উঠে পড়লো।চারুশীলা চকলেটের প্যাকেটটা ঋতমের হাতে দিয়ে বলল তোমরা দুজনে ভাগ করে খেয়ে নিও।
চারুদি চলে যাবার পর বাড়ীটা আবার নিস্তব্দ হয়ে গেল।কৌশিকি নির্জনতা ভালোবসে বলেই সুদীপ্ত আর কৌশিকি দুজনে মিলেই এরকম জায়গা দেখে বাড়ী করেছে।কিন্তু কৌশিকির আজকাল যেন কেমন একাকী মনে হয়।এতো বড় বাড়ীতে নিজেই গুনগুন করে একটা গান গাইছিল।রাত্রি দশটা বাজে।ঋতম আর মুন্নি ঘুমিয়ে গেছে।বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।কৌশিকি বাচ্চা দুটোর গায়ে চাদরটা ঢেকে দিয়ে নিজে বেডরুমে শুয়ে পড়লো।ঘুম কিছুতেই আসছিল না।মনের মাঝে খেলা করছিল অনেক কথা।সেদিনের কথার আসর আসতে ফিকে হয়েছে মনে।অথচ তবু মনে একটা গাড় দাগ রয়ে গেছে তার।বারবার মনে আসছিল সেই বীভৎস ঘৃণ্য মুখটা।একএক করে ধারাবাহিক ভাবে ঘটনাটা সেজে উঠছিল মনে।কৌশিকি ঘেমে উঠছিল ধীরে ধীরে।সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে।পরনের গাউনটা সেঁটে যাচ্ছে গায়ে।শরীরে যেন এক অযাচিত উত্তেজনার ঢেউ উঠছিল।আস্তে আস্তে সেই ঘৃণ্য ভয়ংকর অনুভূতিও যেন কামনায় পরিণত হচ্ছিল।দীর্ঘকায় কুৎসিত সেই ঘর্মাক্ত চেহারাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না কৌশিকি।নিজের অজান্তেই তা পিপাসায় পরিণত হচ্ছে।শরীরটা যেন কেউ বিছানার সাথে বেঁধে রেখেছে।আর তার ধর্ষক পুরুষ যেন কল্পনায় তাকে আবার ধর্ষণ করছে।না ধর্ষণ নয় এ এক তীব্র বিকৃত যৌন উত্তেজনা।এক ঝটকায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো কৌশিকি।ছিঃ একি কাজ করছে তার মস্তিষ্কে। উঠে সোজা টয়লেটে চলে গেল সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলল।তারপর নিজেকে বলতে থাকলো কৌশিকি, 'লিভ ইট কৌশিকি! লিভ ইট'
********
 
হাইওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় পাঁচ কিমি পথ পেরিয়ে এসেছে খুরশেদ।এ'কদিনে বিশেষ কিছু খাবার জুটত না,যদি না যাযাবরের দলটা দেখতে পেত।পরিত্যাক্ত আবর্জনা ফেলবার এক ধুসর জায়গায় যাযাবরেরা তাঁবু ফেলেছে।খুরশেদ বিড়ি টানছিল তাই দেখে যাযাবর দলের একজন ময়লা চেহারার ৩০-৩২এর এক যুবক এগিয়ে এসে বলল 'বিড়ি মিলেগা?'খুরশেদ নিজে ভিখারি অন্য কে বিড়ি দেওয়ার কথা শুনে মনে মনে হাসলো।কোমরের কাছে লুঙ্গির মোড়ক থেকে একটা বিড়ি বের করে দিল।যাযাবর যুবকটি খুরশেদের কাটা পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,' ভিখ মাঙতা হ্যায় কা?' খুরশেদ বলল আল্লা কা দুয়া সে অব এহি কাম হ্যায়'
যুবকটির যেন দয়া হল বলল 'চল আজ সে হামারা দোস্ত হ্যায় তু,
কিতনা উমর হ্যায় তেরা?'
খুরশেদ জানে এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে তাকে 'বলল উমর জানকে দোস্তিকো কিউ তকলিফ মে ফেঁক রাহা হ্যায়'
যাযাবরটি খুরশেদের মত অত স্বাস্থ্যবান নয়।রোগাটে,উচ্চতায় খুরশেদের কাঁধও অতিক্রম করেনি। তবুও খুরশেদের পিঠ চাপড়ে বলল,'আরে ভোসড়িকে,সিধা বল না উমর কিতনা হ্যায়?'
খুরশেদ বেশি ঝামেলায় না গিয়ে বলল, '৪৫-৪৬'
যাযাবরটি বলল, 'চল আজসে তু মেরা বড়া ভাই'
এভাবেই খুরশেদ যাযাবর দলে এলো।ওই যাযাবর যুবকের নাম সালকু।যদিও সালকুর গোষ্ঠীর অন্যরা খুরশেদকে দেখে প্রথমে নিতে চায়নি।খুরশেদ মনে মনে গালি দিল ওদের 'শালে ইয়ে লোক ইতনা বদসুরত,গন্ধা হ্যায় অর মাদারচোদ লোক হামে এনকার কর রাহা হ্যায়'
সালুকুর বউ ফুলমনি বয়স কুড়ি-বাইশ।শুঁটকি গোছের কুৎসিত চেহারা।খুরশেদকে দেখে সালকুর দিকে চেয়ে বলল,'ইসকো কাঁহাসে মিলা বে?,ইয়ে ভিখারি তো গুন্ডা যাইসা লাগ রাহা হ্যায়!'
'চুপ শালী,ইয়ে মেরা বড়া ভাই হ্যায় বে' ধমকে উঠলো শালকু।
 
এই কয়েকদিন যাযাবরদের সাথে থেকে খুরশেদের ভালোই খাবার জুটলো।বিশেষ করে সালকু নেশায় থাকায় খাতির যত্ন করে সবসময়।
সন্ধ্যে বেলা সালকুর কাছ থেকে গাঁজা খেয়ে মাথাটা ধরে আছে খুরশেদের।সালকু নেশার ঘোরে সেখানেই পড়ে থাকল।খুরশেদ আস্তে আস্তে হাঁটা দিল যেখানে তাঁবু ফেলেছে যাযাবর'রা সেই দিকে।সালকুর তাঁবুর ভিতরটা একটা কুপি জ্বলছে।তাঁবুর ফাটল দিয়ে খুরশেদ তাকাতেই দেখতে পেল সালকুর বউ ফুলমণি বসে আছে। উদলা করে আঁচল ফেলে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে।মাই দুটোই আলগা।ছোট ছোট কালো দুটো স্তনের একটা পোরা রয়েছে বাচ্চাটার মুখে অন্যটা পুরো অনাবৃত হয়ে বেরিয়ে আছে।খুরশেদের চোখ আটকে গেল।যে স্তনটা আলগা আছে তার থেকে চুইয়ে পড়ছে দুধের ফোঁটা।অমন দৃশ্য যে খুরশেদ আগে দেখেনি তা নয়।আনোয়ারা যখন মুন্নিকে দুধ খাওয়াতো তখন বহুবার দেখেছে সে।দুগ্ধবতী স্ত্রীর স্তন সন্তানের জন্য সচরাচর কেউ পান করে না।কিন্তু খুরশেদের বিকৃত যৌনাচার ছিল আনোয়ারার স্তনপান।মুন্নিকে দুধ খাওয়ানোর পর বুকে দুধ থাক না থাক খুরশেদ চুষে চুষে নিংড়ে নিত আনোয়ারার স্তন।ফুলমণিকে দেখে আনোয়ারার কথা মনে আসছিল খুরশেদের।হঠাৎই নজর পড়লো ফুলমণির খুরশেদের দিকে।খুরশেদ সেখান থেকে তড়িঘড়ি চলে গেল।
 
বেশ কয়েকদিন ভালোই কাটলো খুরশেদের।ফুলমণি খুরশেদকে দেখলেই কেমন একটা নজরে দেখে।খুরশেদ বুঝতে পারে।খুরশেদের তাগড়া চেহারা যতই কুৎসিত ও নোংরা হোক সারাদিন নেশায় থাকা সালকুর বউ ফুলমণির কাছে আকৃষ্টজনক।ফুলমণি নিজের মাথায় পরিপাটি করে চুল বাঁধে, অন্যান্য যাযাবরদের থেকে একটু বেশিই পরিষ্কার রাখে।খুরশেদের নজর এড়ায় না ফুলমনির এ হেন আচরণ।সালকুর বউকে যে চাইলেই খুরশেদ ভোগ করতেই পারে তা খুরশেদের অজানা নয়।কিন্তু ভিখারি খুরশেদ একবার যখন অভিজাত,শিক্ষিতা,সুন্দরী কৌশিকিকে জোর করে ভোগ করেছে,তখন তার কাছে এসব ফিকেই লাগে।
 
ভর দুপুরে সালকু নেশার ঘোরে চুর হয়ে আছে।খুরশেদ দেখলো যাযাবরদের একটি ছেলে ছিলিম নিয়ে বসে আছে।ছেলেটির কাছে খৈনি পাওয়া যায়।খুরশেদ তাকে গিয়ে খৈনি চাইলে সে খৈনির ডাব্বাটা এগিয়ে দেয়।খুরশেদ কুলির কাজ করবার সময় মাঝে মধ্যে খৈনি খেত।হাতের মধ্যে খৈনি ডলতে ডলতে ছেলেটির দিকে কিছুটা দিয়ে নিজে বাকিটা পুরে নেয়।ছেলেটিও ছিলিমটা বাড়িয়ে দেয়।দু দম মেরেই খুরশেদ উঠে পড়ে ঝোপের কাছটায় জেতে ফুলমণি সামনে এসে ঘিরে দাঁড়ায়।ছিনালি করে বলে, 'ক্যায়ারে মেরে কো ছুপকে দেখতা হ্যায়,লেকিন কুছ নেহি করতা হ্যায় কিউ?মরদ হোকে দিখা' ফুলমণির এই কথাতে খুরশেদের মাথায় আগুন চেপে গেল।এক ঝটকায় ফুলমণির ব্লাউজটা খুলতে গিয়ে হাতে ব্লাউজে আঁটা সেফটিপিন ফুটে গেল।ফুলমণি ছিনালের মত হাসতে থাকলো।ফুলমণি নিজেই একটা মাই আলগা করে চেপে ধরলো খুরশেদের দিকে তাক করে।সটান বুক থেকে একটা দুধের স্রোত খুরশেদের গায়ে এসে পড়লো।ফুলমণি হি হি করে হেসে চলে গেল।যাবার সময় বলল 'রাতপে আনা পিলাউঙ্গা তুঝে'
 
যাযাবর'রা নানা রকম জড়িবুটি বেচে রোজগার করে।তার সাথে দল বেঁধে তোলা তুলার মত করে ভিক্ষা চায়।খাবার দাবারের চেয়ে নেশার দ্রব্যই এরা বেশি কেনে।রাত হলে নারী পুরুষ একসাথে নেশা করে।ফুলমনির আহ্বানে রাতে খুরশেদ যায়নি।মুন্নির কথা মনে পড়ছিল তার।যতই সে বিকৃত কামপিপাসু ধর্ষক হোক পিতৃহৃদয়ে সে একজন মানুষ।আর পাঁচটা পিতার মত।সেই দিনের ঘটনার পর খুরশেদ জানতো তার সেখানে থাকা বিপদ হবে।খুরশেদ পুলিশকে ভয় পায় না।তার ভয় ছিল মুন্নিকে নিয়ে।খুরশেদ যতটুকু চিনেছে কৌশিকি মুন্নিকে বের করে দেবে না।বড়জোর কোনো ভালো হোস্টেলে রেখে আসতে পারে।বরং খুরশেদ যদি ওখানে থাকতো তার মুন্নির ভবিষৎ নষ্ট হয়ে যেত।মুন্নি যে কৌশিকির কাছে ভালো থাকবে তা খুরশেদ ভালো ভাবেই জানে।খুরশেদের মনে মনে অনুশোচনা হচ্ছিল, কৌশিকি তাঁর এত উপকার করেছে।তাঁর সাথে এসব করা ঠিক হয়নি।নিজের বিকৃত কামলালসাকে চেপে রাখতে পারেনি।পরক্ষনেই অভিজাত শিক্ষিতা কৌশিকির মুখটা তার কাছে ভেসে উঠছিল।দুধশুভ্র ফর্সা কোমল শরীর।স্নিগ্ধ সুন্দরী মুখে মিষ্টি হাসি।চোখের সামনে ভাসছিল ব্লাউজে ঢাকা অভিজাত স্তনদয়।নরম,মেদহীন অথচ মাংসল ফর্সা পেট ও নাভী।খুরশেদ আলি নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।লুঙ্গি সরিয়ে বের করে আনলো বৃহৎ লিঙ্গটা।হাতের মধ্যে ধরে খোলা আকাশের তলায় শুয়ে শুয়ে হাত চালাতে থাকলো।ফুলমণিকে পরিত্যাগ করে সে হস্তমৈথুন করে চলেছে তার স্বপ্নের নারীর কথা ভেবে।
 
রাত গভীর হলে নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে চারপাশ সারা কলকাতার ব্যস্ততার শব্দ এখানে এসে পৌঁছায় না।দূর থেকে শুধু হাইওয়ে দিয়ে যাওয়া গাড়ীর হালকা শব্দ ভেসে আসে।কৌশিকির আজকাল রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়।একা একা নানা কথা ভাবতে ভাবতে সে ঠিক একই জায়গায় এসে স্থির হয়।খোঁড়া ভিখারিটার উন্মাদ আচরণ যেন চেপে আছে তার ওপর।প্রথমে একরাশ ঘৃণা দিয়ে শুরু হলেও শেষমেষ হেরে যায় কৌশিকি।ঠিক সেই ধর্ষণের রাতের মত।শরীরে এক লালসার জন্ম নিচ্ছে।কৌশিকি বুদ্ধিমতী যুক্তিবাদী।যুক্তি দিয়ে ভাববার চেষ্টা করে কেন এমন হচ্ছে।কেন সেদিন কৌশিকি হার মেনে নিল।সেদিন কি কৌশিকি শেষমেষ ধর্ষিতই হয়েছিল।খুরশেদ বলপূর্বক করলেও কৌশিকি কি উপভোগ করেনি?একাধিক প্রশ্নের জন্ম হচ্ছিল মাথার ভেতর।কৌশিকির চোখের সামনে কুৎসিত দৈত্যাকার নোংরা খোঁড়া লোকটার প্রতি ঘৃণা যেন ধীরে ধীরে উত্তেজনায় রূপান্তর হচ্ছিল।এমন রূপান্তর কৌশিকি চায়নি।কিন্তু তবু সব ভেদবুদ্ধি হারিয়ে ফেলছিল সে।সম্পুর্ন ভিন্ন শ্রেণী ভিন্ন মেরুর দুই মানব মানবী একই রাতে এক অদ্ভূত কামনায় ভুগছিল।একপাশে যাযাবর এলাকায় খোঁড়া কুৎসিত নোংরা '. এক ভিখারির কামনা অন্যপাশে ইতিহাসের অধ্যাপিকা,শিক্ষিতা,সুন্দরী,অভিজাত,বিবাহিত,এক সন্তানের মা কৌশিকি সেনগুপ্ত না চাইলেও অবাঞ্ছিত কামনায় বিভোর হয়ে উঠছিল।

পরের পর্ব - কৌশিকি - ০২

Comments

Popular posts from this blog

পার্ভার্ট - ০১

উপভোগ - শেষ পর্ব

শ্রীতমা - ০১